অ্যান্ড্রয়েড
প্লাটফর্ম ব্যবহারকারীকে অনেক গুলো নিরাপত্তা স্তরের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর
বিভিন্ন রকমের তথ্য নিরাপদ রাখতে সাহায্য করে। লক স্ক্রিন থেকে শুরু করে
প্রতিটি অ্যাপলিকেশনের জন্যেও ইচ্ছে করলে একজন ব্যবহারকারী ব্যবহার করতে
পারেন নানা রকম নিরাপত্তা স্তর। সাধারণ লক স্ক্রিনের নিরাপত্তায়
অ্যান্ড্রয়েড প্লাটফর্ম কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রদান করে থাকে। আপনার যদি
একটি অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন থেকে থাকে তবে নিশ্চয়ই আপনি এতদিনে
নিরাপত্তার জন্য লক স্ক্রিনের সিকিউরিটি লেয়ার ব্যবহার করেছেন। বিভিন্ন রকম
ব্যবহারকারীর কথা মাথায় রেখে লক স্ক্রিনের এই সিকিউরিটি লেয়ারে
অ্যান্ড্রয়েড এনেছে বিভিন্ন ভ্যারিয়েশন। অক্ষর, ক্রমিক সংখ্যা এবং
প্যাটার্ন – রাখা হয়েছে তিন রকমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবে এগুলোর মধ্যে
সবচাইতে জনপ্রিয় হচ্ছে ‘প্যাটার্ন লক’, কেননা এতে করে সহজে আঙ্গুল না উঠিয়ে
স্মার্টফোনটিকে আনলক করে ফেলা যায়। কিন্তু যদি আপনি আপনার স্মার্টফোনে
আপনার ডিফাইন করা প্যাটার্ন লকটি ভুলে গিয়ে থাকেন তবে কি করবেন? চিন্তার
কারণ নেই, আজকের টিউটোরিয়ালে আমরা তাই জানার চেষ্টা করব।
আজকের টিউটোরিয়ালটি আমি দুই ভাগে ভাগ করেছি। এগুলো হচ্ছে,১। বেসিক লেভেল; এই পদ্ধতিটি সবাই অনুসরণ করতে পারবেন, এমনকি আপনি যদি অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের সাথে এখনও ফ্যামিলিয়ার না হয়ে থাকেন তাহলেও।
২। অ্যাডভান্স লেভেল; এই পদ্ধতিটি অ্যাপলাই করার জন্য আপনাকে সামান্য কিছু অ্যাডভান্স বিষয় সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে, তবে কঠিন কিছুই না।
তাহলে চলুন, শুরু করা যাক।
বেসিক লেভেলঃ
কিছু কিছু স্মার্টফোন লক করা অবস্থায় ফিজিক্যাল আনলক হার্ডওয়্যার বাটন চাপ দিলে প্রথমে স্লাইড লক স্ক্রিনে নিয়ে যায় আবার কিছু কিছু সরাসরি প্যাটার্ন লক স্ক্রিনে নিয়ে যায়, যদিও এই প্রক্রিয়াটি পুরোটাই ‘সেটিংস’ এর নির্ভর করে। যাই হোক, ধরুন আপনি প্যাটার্ন লক স্ক্রিনে আছেন। বার বার ভুল প্যাটার্ন কী দেয়ার পর আপনাকে কিছুটা সময় (৩০ সেকেন্ডের মত) অপেক্ষা করতে বলবে। নিচের স্ক্রিন শটটি দেখুন।
এক্ষেত্রে যেহেতু আপনি আপনার ‘প্যাটার্ন লক’ ভুলে গিয়েছেন তাই অপেক্ষা করে লাভ হচ্ছেনা। তাই, ‘Forgot pattern” অপশন সিলেক্ট করুন। নিচের মত স্ক্রিন দেখতে পাবেন, রম বা থিম ভেদে স্ক্রিনের ইন্টারফেস সামান্য পরিবর্তিত থাকতেই পারে তবে মূল বিষয়গুলো বদলাবে না।
এরপর ইউজার নেমের স্থানে আপনার সেই জিমেইল অ্যাকাউন্টটির ইমেইল ঠিকানা লিখুন যা আপনি আপনার স্মার্টফোনের সাথে ইন্টিগ্রেটেড করেছিলেন, এবং পাসওয়ার্ডের স্থানে ইমেইলের পাসওয়ার্ডটি দিন। সঠিক তথ্য প্রদানের পর আপনার স্মার্টফোনটি আপনার তথ্য চেক করবে এবং সঠিক হলে আপনাকে নতুন প্যাটার্ন ড্র করার জন্য বলবে। প্যাটার্নটি একবার ড্র করার পর কনফারমেশনের জন্য আপনাকে আবারও একবার ড্র করতে বলবে। ব্যাস কাজ শেষ!!
অসুবিধা সমূহঃ
১। অনেকেই স্মার্টফোনের সাথে এখনও জিমেইল অ্যাকাউন্ট ইন্টিগ্রেটেড করেন না, হয়ত বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। অথবা, একবার জিমেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের পরে এর পাসওয়ার্ড ভুলে যান। এরকম হলে এই পদ্ধতিটি কাজে আসবে না।
২। আপনার ফোনটি ইন্টারনেটের সাথে কানেক্টেড থাকতে হবে। আমি অফলাইনে এই পদ্ধতিটি ব্যবহারের চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছি।
উপরের পদ্ধতি কাজ না করলে আরও একটি বেসিক পদ্ধতিতে আপনি আপনার স্মার্টফোনটি আনলক করতে পারবেন। এজন্য আপনাকে আপনার স্মার্টফোনটির রিকোভারীতে গিয়ে হার্ড রিসেট করতে হবে। হার্ড রিসেট করার জন্য আপনার স্মার্টফোনের ভলিয়্যুম আপ অথবা ডাউন (একেক স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে একেক রকম) এবং লক বাটন একসাথে চেপে ধরে রাখতে হবে। এরপর ‘রিকভারী’ স্ক্রিন এলে হার্ড রিসেট করে ফেলুন।
অসুবিধাঃ আপনার স্মার্টফোনের ইন্টারনাল স্টোরেজে থাকা ডকুমেন্টস, কন্টাক্টস এবং ম্যাসেজ মুছে যাবে।
অ্যাডভান্স লেভেল
আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, ‘বেসিক’ পদ্ধতিতে কাজ হলে ‘অ্যাডভান্স’ পদ্ধতি কেন? কেননা, উপরের দুটি পদ্ধতিরই বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এজন্যেই আমরা অ্যাডভান্স লেভেল ব্যবহার করব। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
এই পদ্ধতিকে আমি অ্যাডভান্স লেভেল বলেলেও মূলত কাজ মোটামুটি সহজই। এই পদ্ধতি প্রয়োগ করার সময় আমার স্মার্টফোনটি রুটেড ছিল এবং “কাস্টম রিকভারীতে ছিল তবে রুটেড নয়” – এরকম স্মার্টফোনেও কাজ করবে বলে আশা করছি।
সতর্কতাঃ যদিও আমি ইতোমধ্যে চেষ্টা করে সফল হয়েছি এবং কোন রকম সমস্যার সম্মুখীন হইনি তবুও এই পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে কেউ যদি কোন রকমের ক্ষতির সম্মুখীন হন তবে এর জন্য প্রিয় টেক এবং আমি কোন ভাবেই দায়ী থাকবোনা।
এই পদ্ধতির জন্য আপনাকে ‘Aroma File Manager’ ফাইল ম্যানেজারটি ডাউনলোড করতে হবে। আপনি এখান থেকে এটি ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
চলুন পদ্ধতিগুলো ধাপে ধাপে জেনে নেয়া যাকঃ
আমি ধরে নিচ্ছি আপনার স্মার্টফোনটিতে কাস্টম রিকভারী দেয়া আছে এবং আপনি প্যাটার্ন বা পাসওয়ার্ড ভুলে গিয়েছেন।
১। ফাইল ম্যানেজারটি ডাউনলোড করুন, এক্সট্র্যাক্ট করবেন না।
১। স্মার্টফোনের মেমরী কার্ড খুলে মেমরী কার্ডের সাহায্যে অ্যারোমা ফাইল ম্যানেজারটি মেমরী কার্ডে প্রবেশ করান। মেমরী কার্ডের কোন ফোল্ডারে রাখবেন না, ফাইলটি মেমরী কার্ডের রুটে রাখুন।
২। আপনার ফোনটি রিকভারীতে রিবুট করুন।
৩। CWM এর ক্ষেত্রে, সবগুলো পার্টিশন মাউন্ট করুন, এমনকি আপনার যদি কোন sd-ext পার্টিশন থেকে থাকে তবে সেটিও মাউন্ট করুন। এবং এরপর ফাইলম্যানেজারটি ফ্ল্যাশ করুন। ফ্ল্যাশ করার সাথে সাথে দেখবেন ফাইল ম্যানেজারের একটি গ্র্যাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস চলে এসেছে।
৪। এখন, /data/system – এ প্রবেশ করুন। এক্ষেত্রে, আপনার যদি কোন sd-ext পার্টিশন থেকে থাকে তবে /sd-ext/system – এ প্রবেশ করুন।
৫। আপনি একটি gesture.key নামের ফাইল দেখতে পারবেন, মুছে দিন। আর যদি আপনি পাসওয়ার্ড মুছে দিতে চান তবে password.key মুছে দিন। ব্যাস হয়ে গেল।
খেয়াল করুন, ৩ নম্বর প্রক্রিয়া থেকে TWRP রিকভারীর ক্ষেত্রেও একই হবে। আর স্টক রিকভারীতে যেহেতু মাউন্ট অপশন থাকেনা তাই সরাসরি ফাইলম্যানেজারটি রিকভারী থেকে ফ্ল্যাশ করে ৪ এবং ৫ নম্বর প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন।
আশা করি, আজকের টিউটোরিয়ালটি অনেকের কাজেই আসবে। অ্যাডভান্স পদ্ধতিটির ক্ষেত্রে কিছুটা সাবধানে কাজ করবেন। আর আমি সবগুলো পদ্ধতিই নিজে প্র্যাকটিক্যাল করে দেখেছি তাই যদি কেউ সফল না হয়ে থাকেন তবে পদ্ধতিগুলো ভুল না ভেবে আবারো ধীরে সুস্থে চেষ্টা করুন। ভালো থাকুন সবাই।
0 comments:
Post a Comment